Google Wallet এবং Google Pay: সম্পর্ক, পার্থক্য ও আধুনিক ডিজিটাল পেমেন্টের ভবিষ্যৎ

Google Wallet এবং Google Pay: সম্পর্ক, পার্থক্য ও আধুনিক ডিজিটাল পেমেন্টের ভবিষ্যৎ

 

Google Wallet এবং Google Pay

ভূমিকা

বর্তমান ডিজিটাল যুগে অর্থ লেনদেন, কার্ড সংরক্ষণ, টিকিট, আইডি বা বিভিন্ন পাস ব্যবস্থাপনা সহজ ও নিরাপদ করতে গুগল তাদের দুটি জনপ্রিয় সেবা নিয়ে এসেছে—গুগল ওয়ালেট (Google Wallet) এবং গুগল পে (Google Pay)। অনেকেই এই দুটি অ্যাপের মধ্যে বিভ্রান্ত হন, বিশেষ করে নতুন ব্যবহারকারীরা। এই আর্টিকেলে আমরা বিশদভাবে আলোচনা করব—গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে কী, তাদের মধ্যে সম্পর্ক ও পার্থক্য কী, এবং ব্যবহারকারীদের জন্য কোনটি কিভাবে উপকারী।

গুগল ওয়ালেট কী?

গুগল ওয়ালেট একটি নিরাপদ ও ব্যক্তিগত ডিজিটাল ওয়ালেট, যেখানে আপনি আপনার পেমেন্ট কার্ড, পাস, টিকিট, ডিজিটাল আইডি, গাড়ির চাবি ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে পারেন। এটি আপনার স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচে সহজেই অ্যাক্সেসযোগ্য এবং নিরাপদভাবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে।

গুগল ওয়ালেটের মূল বৈশিষ্ট্য:

  • ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড সংরক্ষণ

  • বোর্ডিং পাস, ইভেন্ট টিকিট, লয়্যালটি কার্ড, ট্রানজিট কার্ড সংরক্ষণ

  • ডিজিটাল আইডি ও কাগজপত্র সংরক্ষণ

  • এনএফসি (NFC) প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ পেমেন্ট সুবিধা

  • স্মার্টফোন ও স্মার্টওয়াচে ব্যবহারযোগ্য

গুগল পে কী?

গুগল পে মূলত একটি ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে আপনি অনলাইনে, ইন-অ্যাপ বা দোকানে ট্যাপ-টু-পে সুবিধায় অর্থ প্রদান করতে পারেন। এটি আপনার সংরক্ষিত কার্ড ব্যবহার করে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দেয়।

গুগল পে-এর মূল বৈশিষ্ট্য:

  • অনলাইন ও ইন-স্টোর পেমেন্ট

  • বন্ধু-পরিবারের কাছে অর্থ পাঠানো (কিছু দেশে)

  • ইউপিআই (UPI), কিউআর (QR) কোড, বা এনএফসি (NFC) প্রযুক্তি ব্যবহার

  • লয়্যালটি কার্ড, গিফট কার্ড, অফার ব্যবহার

গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে: সম্পর্ক ও পার্থক্য

অনেকেই মনে করেন, গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে একই জিনিস। বাস্তবে, এই দুটি সেবা একে অপরের পরিপূরক হলেও কার্যকারিতার দিক থেকে আলাদা।

মূল পার্থক্য:

বিষয়

গুগল ওয়ালেট

গুগল পে

প্রধান উদ্দেশ্য

ডিজিটাল আইটেম সংরক্ষণ

অর্থ লেনদেন/পেমেন্ট

কী সংরক্ষণ করা যায়

কার্ড, টিকিট, পাস, আইডি, চাবি ইত্যাদি

শুধুমাত্র পেমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য

পেমেন্ট সুবিধা

কিছু দেশে পেমেন্ট করা যায়

পেমেন্টের জন্য বিশেষভাবে তৈরি

ব্যবহারের ক্ষেত্র

ডিজিটাল ডকুমেন্ট, পাস, টিকিট ইত্যাদি

অনলাইন, ইন-স্টোর, ইউপিআই ইত্যাদি

অ্যাপ আলাদা কিনা

হ্যাঁ, আলাদা অ্যাপ

হ্যাঁ, আলাদা অ্যাপ

সম্পর্ক:

  • গুগল ওয়ালেট হলো সেই অ্যাপ যেখানে আপনি আপনার পেমেন্ট কার্ড ও অন্যান্য ডিজিটাল আইটেম সংরক্ষণ করেন।

  • গুগল পে হলো সেই সার্ভিস, যার মাধ্যমে আপনি গুগল ওয়ালেট-এ সংরক্ষিত কার্ড দিয়ে অনলাইন বা দোকানে পেমেন্ট করতে পারেন।

  • অনেক দেশে, গুগল ওয়ালেট অ্যাপ থেকেই পেমেন্ট করা যায়, আর গুগল পে হচ্ছে সেই প্রযুক্তি বা ব্র্যান্ডিং, যার মাধ্যমে পেমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

    Google Wallet এবং Google Pay

বিভিন্ন দেশে গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে-এর ব্যবহার

বাংলাদেশে:

বাংলাদেশে সম্প্রতি গুগল ওয়ালেট চালু হয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র সিটি ব্যাংকের কার্ড গুগল ওয়ালেট-এ সংরক্ষণ করে এনএফসি-সাপোর্টেড পয়েন্ট-অব-সেল (POS) মেশিনে পেমেন্ট করা যায়। অর্থাৎ, আপনি গুগল ওয়ালেট-এ কার্ড যোগ করে গুগল পে প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্যাপ-টু-পে সুবিধা পাবেন। তবে, QR কোড স্ক্যান, ফান্ড ট্রান্সফার, বা অনলাইন শপিংয়ের মতো পূর্ণাঙ্গ গুগল পে ফিচার এখনো বাংলাদেশে নেই।

ভারতে:

ভারতে গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে দুটি আলাদা অ্যাপ হিসেবে বিদ্যমান। গুগল পে এখানে মূলত ইউপিআই, QR কোড, এবং পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রান্সফারসহ অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। গুগল ওয়ালেট শুধুমাত্র ডিজিটাল ডকুমেন্ট, টিকিট, পাস ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং পেমেন্ট সুবিধা নেই।

যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে:

অনেক দেশে গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে একত্রিত হয়ে গেছে। এক অ্যাপ থেকেই আপনি কার্ড সংরক্ষণ ও পেমেন্ট—দুই সুবিধাই পাবেন। তবে, পেমেন্টের সময় “Google Pay” ব্র্যান্ডিং দেখা যায়, আর সংরক্ষণের জন্য “Google Wallet”।

গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে: ইতিহাস ও বিবর্তন

গুগল ওয়ালেট প্রথম চালু হয় ২০১১ সালে, তখন এটি ছিল একটি মোবাইল পেমেন্ট অ্যাপ। পরে, ২০১৮ সালে গুগল ওয়ালেট ও অ্যান্ড্রয়েড পে একত্রিত হয়ে গুগল পে-তে রূপান্তরিত হয়। ২০২২ সালে গুগল আবার গুগল ওয়ালেট ব্র্যান্ড ফিরিয়ে আনে এবং এটিকে ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে পেমেন্ট, টিকিট, পাস, আইডি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়।

গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে কি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত কি

গুগল ওয়ালেট (Google Wallet) এবং গুগল পে (Google Pay) একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, তবে তারা সম্পূর্ণ এক নয়। এই দুইটি গুগলের ডিজিটাল অর্থ লেনদেন ও সংরক্ষণের দুটি আলাদা সেবা, যাদের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা কিছুটা ভিন্ন হলেও, ব্যবহারিক দিক থেকে তারা একে অপরের পরিপূরক।

গুগল পে মূলত একটি ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা অনলাইন ও অফলাইনে অর্থ প্রদান করতে পারেন, বিশেষ করে ইউপিআই, কিউআর কোড, কিংবা কার্ডের মাধ্যমে। এটি দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং কিছু দেশে পিয়ার-টু-পিয়ার মানি ট্রান্সফারও সম্ভব।

অন্যদিকে, গুগল ওয়ালেট একটি ডিজিটাল ওয়ালেট অ্যাপ, যেখানে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, বোর্ডিং পাস, টিকিট, আইডি, ডিজিটাল কনটেন্ট ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায়। এটি মূলত আপনার ডিজিটাল ডকুমেন্ট ও কার্ড সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু দেশে সংরক্ষিত কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্টও করা যায়।

সম্প্রতি অনেক দেশে গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে একসাথে কাজ করে, অর্থাৎ গুগল ওয়ালেট-এ সংরক্ষিত কার্ড ব্যবহার করে গুগল পে প্রযুক্তির মাধ্যমে ট্যাপ-টু-পে বা কন্টাক্টলেস পেমেন্ট করা যায়। তবে, গুগল পে ও গুগল ওয়ালেট একে অপরের নাম পরিবর্তন নয় এবং তারা সম্পূর্ণ এক নয়—তাদের নিজস্ব আলাদা ফিচার ও উদ্দেশ্য রয়েছে।

সংক্ষেপে, গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, কারণ দুটোই গুগলের ডিজিটাল অর্থ ব্যবস্থাপনা ইকোসিস্টেমের অংশ, কিন্তু তারা আলাদা সেবা এবং ভিন্নভাবে কাজ করে।

Google Wallet এবং Google Pay

কি কারণে গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে আলাদা কাজ করে

গুগল ওয়ালেট এবং গুগল পে আলাদা কাজ করে কারণ তাদের উদ্দেশ্য ও ফিচার ভিন্ন। গুগল ওয়ালেট মূলত ডিজিটাল ওয়ালেট হিসেবে কাজ করে, যেখানে আপনি আপনার ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, টিকিট, পাস, আইডি ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে পারেন। এটি আপনার স্মার্টফোনকে একটি ডিজিটাল মানিব্যাগে পরিণত করে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ডকুমেন্ট ও কার্ড রাখা যায়।


অন্যদিকে, গুগল পে হলো পেমেন্ট করার জন্য নির্দিষ্ট একটি প্ল্যাটফর্ম। গুগল ওয়ালেট-এ সংরক্ষিত কার্ড ব্যবহার করে আপনি গুগল পে-র মাধ্যমে দোকান, অনলাইন বা এনএফসি-সাপোর্টেড POS মেশিনে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন করতে পারেন। অর্থাৎ, গুগল ওয়ালেট হলো সংরক্ষণের জন্য, আর গুগল পে হলো সেই সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের জন্য।


এছাড়া, কিছু দেশে গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে একত্রিতভাবে কাজ করলেও, অনেক দেশে তারা আলাদা অ্যাপ ও সেবা হিসেবে বিদ্যমান। যেমন, ভারতে গুগল ওয়ালেট শুধুমাত্র কার্ড ও টিকিট সংরক্ষণের জন্য, আর গুগল পে শুধুমাত্র পেমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হয়।


সংক্ষেপে, গুগল ওয়ালেট ডিজিটাল কার্ড ও ডকুমেন্ট সংরক্ষণের জন্য, আর গুগল পে সেই তথ্য ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের জন্য—এই ভিন্ন উদ্দেশ্যের কারণেই তারা আলাদা কাজ করে।

ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা ও নিরাপত্তা

  • নিরাপত্তা: গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে-তে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যা আপনার তথ্য ও অর্থ নিরাপদ রাখে।

  • সহজ ব্যবহার: একবার কার্ড বা তথ্য সংরক্ষণ করলে, পরবর্তীতে দ্রুত ও সহজে পেমেন্ট বা তথ্য ব্যবহারের সুবিধা।

  • বহুমুখী সুবিধা: শুধু পেমেন্ট নয়, টিকিট, পাস, আইডি, গাড়ির চাবি ইত্যাদি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সুযোগ।

ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা

গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে-এর মধ্যকার পার্থক্য ও সম্পর্ক বুঝে ব্যবহারকারীরা আরও নিরাপদ, দ্রুত ও আধুনিক ডিজিটাল পেমেন্ট ও ডকুমেন্ট ব্যবস্থাপনা উপভোগ করতে পারবেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে-এর নতুন নতুন ফিচার চালু হলে, ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে।

উপসংহার

গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে—দুটি আলাদা কিন্তু পরস্পর-সম্পর্কিত ডিজিটাল সেবা। ওয়ালেট মূলত ডিজিটাল আইটেম সংরক্ষণের জন্য, আর পে অর্থ লেনদেনের জন্য। কিছু দেশে এই দুটি একত্রিত, আবার কিছু দেশে আলাদা। ব্যবহারকারীদের উচিত নিজেদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোনটি কীভাবে কাজ করে, তা জেনে নিয়ে ব্যবহার করা। ডিজিটাল পেমেন্টের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে গুগল ওয়ালেট ও গুগল পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং আগামীতে আরও নতুন ফিচার ও সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যাবে।





Post a Comment